রবিবার, ৩ জানুয়ারী, ২০২১

ভালোবাসার ভূত ভবিষ্যৎ

 


আরাম কেদারায় বসে টিভিতে খবর দেখতে দেখতে একটু ঝিমুনি এসেছিল রতন বাবুর। বয়স বাড়ার জন্যে এবং তার সাথে বিবিধ প্রকারের ওষুধের প্রভাবে সন্ধ্যে থেকেই ঘুম ঘুম পায় ওনার। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঘাড়ের কাছে একটা মোলায়েম হাতের স্পর্শ পেয়ে চটকটা ভাঙ্গলো।

“প্রেসারের ওষুধ আবার ভুলে গেছ আজকে?”, স্বপ্নাদেবী ভুরু কুঁচকে অনুযোগের সুরে বললেন। কপালে লাল টিপ আর গায়ে লাল পাড় সাদা জামদানী শাড়ি। মাথার খোঁপায় চাঁপা ফুল গোঁজা। ফুলের মিষ্টি গন্ধ এসে মন ভালো করে দিল রতন বাবুর। স্ত্রী, তাঁর ভালো লাগার কথা মনে রেখে, সুন্দর করে সেজে এসে দাঁড়িয়েছেন ওঁর পিছনে।

“এলে তাহলে”, রতন বাবু বাম হাত বাড়িয়ে স্ত্রীর হাতটা একটু ছুঁলেন, “আজকে এতো দেরি হল?”

স্বপ্নাদেবী পাশের চেয়ারে বসে রতন বাবুর গায়ে আলতো ভাবে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, “কই আবার দেরি? সব কাজ ফেলে এলুম তো। তুমি কেন তোমার রোজকারের জিনিস সব ভুলে যাও? তোমার চিন্তায় আমার এখনও কিছু করার জো নেই” স্বপ্নাদেবীর কথায় চিন্তা আর অভিমান ঝড়ে পড়ল।

“আমি ভুললেই তো তুমি আস মনে করাতে। নইলে তোমার দেখা কি করে পাই?”, রতনবাবু হাল্কা হেসে উত্তর দিলেন। তারপরে, টেবিলে পড়ে থাকা চশমাটা তুলে চোখে লাগিয়ে নিলেন স্ত্রীকে ভালো করে দেখবেন বলে। প্রেসারের ওষুধ তিনি সত্যি ভুলে গেছেন ঘাড়ের কাছে শিরশিরানি অনুভূতি বুঝিয়ে দিচ্ছে রক্তচাপ বাড়ছে। একটু বাড়াবাড়ির দিকে গেলেই স্বপ্না দেবী ঠিক মনে করিয়ে দেন, কখন কোন ওষুধ খেতে হবে। তাঁর দীর্ঘ দিনের অভ্যেস এখনও যায়নি।

“মা... দাদুন আবার বকবক শুরু করেছে” ছোট্ট কস্তূরী লাফাতে লাফাতে ঘরে ঢুকেই পিছনের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে তার মা কে জানান দিল,“দাদুন নিশ্চয়ই আবার ওষুধ খায়নি

কস্তূরীর মিষ্টি আদর আদর গলায় শব্দগুলো শুনে প্রাণ জুরিয়ে গেলো রতনবাবুর। দুদিন আগেই এসেছিল ওরা কিন্তু এর মধ্যেই মনে হচ্ছে যেন এক যুগ পেরিয়ে গেছে।

“এই যে তোরা এসে গেছিস! এবার আমি সব খাব,” রতনবাবু সোৎসাহে আরাম কেদারা ছেড়ে উঠতে গিয়েও কোমরের ব্যাথায় আবার বসে পড়লেন। হাত বাড়িয়ে বললেন,“আয় দিদুন ঝপাং করে কোলে ঝাঁপা তো দেখি” কস্তূরী ওঁর মেয়ের ঘরের নাতনী। মা, মেয়ে দুজনেই স্বপ্নাদেবীর মুখের আদল পেয়েছে, হুবহু। রতনবাবু দেখলেন, স্বপ্না দেবীও গর্ব ভরা দৃষ্টিতে দেখছেন তাঁর দৌহিত্রীকে।

কস্তূরী রতনবাবুর কোল বেয়ে উঠে ঘাড় জড়িয়ে ধরে বলল,“দাদুন, তুমি দিদিনের ছবিতে মালা পড়াতে আবার ভুলে গেছ? সত্যি তোমার কিচ্ছু মনে থাকে না। আজকে না দিদিনের জন্মদিন!”

রতনবাবুর খেয়াল হল, উনি বেমালুম ভুলে গেছিলেন সব। সকালে কাজের মেয়ে সুলতাকে দিয়ে বাজার থেকে চাঁপা ফুলের মালা কিনিয়ে আনিয়েছিলেন সেটা স্বপ্না দেবীর ছবির সামনেই রাখা রয়েছে। আর রাখা রয়েছে স্বপনের দোকান থেকে ইস্তিরি করে আনা জামদানী শাড়িটাও।

“নাও, আমার সতিন এসে তোমাকে আমার কথা মনে করাল” স্বপ্নাদেবী পান চিবুনো ঠোঁট টিপে মৃদু হেসে বললেন,“নিজের একটু খেয়াল রেখ। এখনও অনেক কাজ বাকি তোমার এতো তাড়াহুড়ো করো না। বুঝলে?

রতনবাবু নাতনীকে বুকে চেপে ধরে ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করলেন, এবার থেকে সব নিয়ম মেনে চলবেন।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনাদের মূল্যবান প্রতিক্রিয়া জানান