সোমবার, ১৪ জুন, ২০২১

নাদু ও ভাদু

 -ভাদু, রিক্সাওয়ালা ঠিক জায়গায় নামিয়েছে? দোকানের নাম দেখলুম ক্ষীরদয়াল ভবন।

-উঁহু, ভুল লেখা। ক্ষীরদয়াল কুণ্ডু আমার শ্বশুর। এ’টা ‘শ্রীদয়াল’, মদের গুমটি।


-বলছিস দোকানদার ছড়িয়েছে?

-আবার কি? নির্ঘাত তোর মতন সিদ্ধিখোর।

-যেন তুই খাসনি?

-ওরে নাদু, পাঁচ গেলাসে ভাদু পালের নেশা হয়েছে বলে কোনও দিন শুনেছিস?

-না, তা শুনিনি। তবে এই ওঁচা পাড়ায় মদের কারবার উচিত নয়।

-একদম না। বেলেল্লাপনার একশেষ। শুঁটিয়ে লাল করে দিতে হয়।

-দেওয়ালে ঢঙ করে ওঁম এঁকেছে আবার। ঢিল মারব?

-তুই জানালায় টোকা দিয়ে একখান বোতল জোগাড় কর আগে। মিছিমিছি ঝামেলা বাড়াসনি।

-সিদ্ধির ওপরে বাংলা চলবে?

-আলবাত! দৌড়াবে। আমি তো বাংলায় গান গাই…

-বিনি পয়সায় দেবে?

-কেন? তোকে যে দুটো পাঁচশ ধার দিলুম নাদু, সে’গুলো বের কর।

-পাঁচশ নয় ভাদু, পাঁচ।

-চেতনা চৈতন্য খুইয়েছিস মনে হচ্ছে। বউয়ের নামে দিব্যি করে বলতে পারি পাঁচের পাশে দুটো করে শূন্য ছিল।

-নিজের বউয়ের দিব্যি সবাই কাটতে পারে। রমাপতি-র বউয়ের নাম নিয়ে বল দেখি।

-নাঃ, তোর কথাই ঠিক। শূন্যের আবার দাম আছে নাকি?

-এক নয়া পয়সাও নয়। মাত্র দুটো নোটে রিক্সাওয়ালা খুশি মনে কত উপরি হাওয়া খাওয়াল সেটা ভাব।

-আয়, বুকে আয়। তুই আমার মাদার ফ্রম ডিফারেন্ট ব্রাদার। কিন্তু বৃষ্টি নামল যে রে নাদু? ছাতা এনেছিস?

-পকেটে ছিল, খুঁজে পাচ্ছি না।

-ধুতির আবার পকেট কি রে শালা? গায়েও শুধু স্যান্‌ডো। ফতুয়াটা কোথায় হারালি?

-পকেট মানে কোঁচড়। আমারটা ন্যানো আম্ব্রেলা, সব জায়গায় এঁটে যায়। বোতাম টিপলেই ঝপাং করে খোলে। খাসা চাইনিজ কারিগরি।

-শেষে বিলিতি মাল নিলি?

-বিলিতি না, চীনা।

-ওই একই হল। স্বদেশী তো নয় বাপু। ছাতা বানাত বটে আমার দাদু। সায়েব খ্যাদানো ষোল পাঁজরার জিনিস। পাকা সেগুন কাঠের ডান্ডি। একবার পিঠে পড়লেই ভারত ছাড়ো। উফ্‌, কি সময় ছিল তখন। চারিদিকে গান হচ্ছে, দাদুর দেওয়া মোটা ছাতা… মাথায় খুলে নে রে ভাই…! আর খুললেই পুরো গোবর্ধন পর্বত। গোটা পাড়ার লোক ধরে যায় ওর নিচে। কোথায় লাগে তোর ন্যানো তার কাছে। দূর ছাই, পা ভিজে গেল দেখ।

-বাদলায় লোকের গা ভেজে। তোর পা ভিজল কীভাবে?

-আমায় শুধোচ্ছিস কেন? জলকে জিজ্ঞেস কর।

-বৃষ্টিটা তা’লে ও’দিকেই ঝেঁপে এসেছে, বুঝলি ভাদু? এ’দিকটা খটখটে শুকনো। সরে আয় দু’পা।

-হ্যাঁ, আহাম্মকির আমসত্ত্ব। তুই আমার ঘাড়ে ওঠ আর লোকে ইয়ে ভাবুক।

-বেশ। তবে নিজের ছাতা দিয়ে কাজ চালা।

-নেই। বউ-কে গতকাল দিয়েছিলুম। সোজা বাপেরবাড়ি নিয়ে গেল।

-চুরি? ভাদু, লাগাম আলগা করেছিস তো মরেছিস। এতো ঘনঘন ও’বাড়ি দৌড়ায় কেন?

-আমিও তাই বললুম। বাপের জন্মদিন। হ্যালির ধূমকেতু তো নয়। পালন করার কী আছে?

-বললি? জিও গুরু। তারপরে?

-অতশত মনে আছে থোরাই। যাইহোক, তুই বোতল পেলি?

-ধুস্‌, দিচ্ছে না। বুড়োটা ঠ্যাঁটা। কানেও খাটো।

-আজকালকার বুড়োগুলো এমনই। আগের মতন কোয়ালিটি নেই। ছিলেন আমার দাদামশাই। কানের ফুটোয় জং, কিন্তু দিদিমা এক মাইল দূর থেকে নিন্দেমন্দ করলেও ঠিক শুনতে পেতেন।

-এই ভাদু, তোর শ্বশুর মদের ব্যবসা করে আগে বলিসনি তো। কাউন্টারে বসে গাল পাড়ছে।

-আমিও কি জানতাম? নে জলটা ধরেছে। তুই বল, এই সুযোগে আমার ছাতা ফেরত দিক। গন্ধে টেকা যাচ্ছে না।

-ছাতায় ঘেরাণও ঢাকে?

-মন থেকে চাইলেই ঢাকে। সে’বার তোর বৌদিকে নিয়ে গেছি সিনেমায়। পেট গড়বড় করছিল। আমায় ছাতা খুলে বসিয়ে দিল। মাইরি বলছি নাদু, কেউ কিচ্ছুটি টের পায়নি।

-ভাদু, ওরা কথা শুনেছে। তোর শ্বশুর আর বউ দল বেঁধে এসেছে বামাল ফেরত দিতে। একী? তুই মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছিস কেন? কী বললি? ভারত ছাড়ো? ছাতা লাগবে না? আমায় দে তবে। এ’দিকেও বৃষ্টি শুরু হল এতক্ষণে।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনাদের মূল্যবান প্রতিক্রিয়া জানান