শুক্রবার, ১৮ জুন, ২০২১

দূরত্ব

 "হোয়াট দ্য....!"


তীক্ষ্ণ
স্বরে বললাম আমি। অবিশ্বাসে চেয়ে রইলাম টেবিলের ওপর রাখা ট্যাবলেটটার কালো স্ক্রিনের দিকে। লো-ব্যাটারির নোটিফিকেশনটা খেয়ালই করিনি মিটিংয়ের ব্যস্ততার মধ্যে। অথচ কাল রাতে চার্জে বসিয়েছিলাম শিওর। প্লাগে ভালো ভাবে গুঁজিনি? চতুর্দিকে উদভ্রান্তের মতন চার্জিং কেবল খুঁজছিলাম তখনই অতনুদা ফোন এলো নিউইয়র্ক থেকে।

"কী হল? মিটিং ছেড়ে বেরিয়ে গেলি কেন? তোর প্রেজেন্টেশন শুরু করার কথা"

"আমায় পাঁচ মিনিট সময় দাও। ট্যাবলেটের ব্যাটারি ফুরিয়ে গেছে। কেবলটাও খুঁজে পাচ্ছি না।"

"নো গডড্যাম এক্সকিউজ রাহুল। আজ সকালেও তোকে ফোন করে মনে করিয়েছি। থ্রি মিলিয়ন ডলারের বিজনেস ইজ অ্যাট স্টেক। তোর ফাঁকিবাজিতে আমি ডুববো এখন।"

"বিশ্বাস করো অতনুদা। কাল রাতেই কাজ শেষ করে ক্লাউডে আপলোড করেছি। এখন আচমকা সুইচড্‌ অফ হয়ে গেল ট্যাব্‌টা। পাওয়ার কর্ডটা কোথায় রাখলাম..."

"জয়েন কর শিগগির। সামলাচ্ছি ততক্ষণ," অতনুদা ফোন রেখে দিল।

অতঃপর ল্যাপটপ। ওয়ার্ক ফ্রম হোম শুরু হওয়ার পরে হাই স্পিড ইন্টারনেট নিয়েছি কাঁড়ি-কাঁড়ি টাকা ঢেলে। কিন্তু সেখানেও গন্ডগোল। ওয়াই-ফাই ডেড। ছুটলাম পাশের ঘরে। দেখলাম, মোডেমের তার খোলা।

"এ’সব কী?" চিল্লিয়ে উঠলাম। নির্ঘাত নমিতাদি ঘর মোছার সময় এই কান্ড করেছে।

"কী হয়েছে? রবিবারের সকালে চেঁচামেচি আরম্ভ করেছ?" দেবযানী হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকে বলল।

"নমিতাদি-কে ছাড়িয়ে দেবে। রাউটার, মোডেম সবার তার খুলে রেখেছে। দরকারের সময় যত ঝামেলা।"

"নমিতাদি?" হেসে ফেলল দেবযানী। "মাস দেড়েক হয়ে গেল আসছেই না। ওর বাড়িতে সবার করোনা হয়েছে ভুলে গেছ। আমরাই তো বারণ করেছি ওকে আসতে।"

কথাটা ঠিক। তবে তদন্তে বসার সময় নেই। মোডেমে আলো জ্বলেছে। ওয়াই-ফাই চালু হতে এখনও মিনিট খানেক। দেরি না করে মেঝেতেই বসে পড়লাম ল্যাপটপ নিয়ে। ইথারনেট কেবল গুঁজে দিলাম মেশিনের পিছনে। দেবযানী কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে চলে গেল। ওর ঘাড়েও অনেক কাজ। স্কুলের অনলাইন ক্লাসের নোট বানানো, রান্না-বান্না ইত্যাদি। আমার অফিসে এমন চাপ চলছে যে সাহায্য করবো তারও উপায় নেই।

যাইহোক, চেষ্টাচরিত্র করে মিটিংয়ে ঢুকলাম আবার। সবার কাছে ক্ষমাটমা চেয়ে কথা বলা আরম্ভ করতেই আবার ডিস্কানেক্‌টেড। এবারে পাওয়ার কাট্‌চাকরীটা মনে হয় গেল।

দৌড়ে বারান্দায় গেলাম। পাশের ফ্ল্যাটে দিব্যি গম্‌মিয়ে টিভি চলছে। শুধু আমারই কপাল পোড়া। কী করব এখন? আমি নিশ্চিত অতনুদা একা সামলাতে পারবে না। সিনিয়র ম্যানেজার আশিসদাও রয়েছে কনফারেন্সে। বিরাট গন্ডগোল হয়ে যাবে। সকলের মুখে চুনকালি পড়বে আমার কারণে। ছটফটিয়ে উঠে ভাবলাম সার্কিটবোর্ডে নিজেই কারিগরী করে দেখি

"একী!"

পুনরায় চমক। মেইন সুইচ টেনে নামানো রয়েছে। একটা টুল রাখা রয়েছে নিচে, মেঝেতে। ঝট্‌ করে বুঝে গেলাম আততায়ী কে।

"বিল্টু!"

গর্জন করতে-করতে সারা ফ্ল্যাটে খুঁজে শেষ পর্যন্ত তাকে পাওয়া গেল বেডরুমে, খাটের তলায়। আমার ট্যাবলেট আর মোবাইলের চার্জার, ভিডিও-গেমের কন্ট্রোলার, টিভির রিমোট ইত্যাদি অনেক কিছু জড় করে সে লুকিয়ে রয়েছে।

"আজকাল প্রচন্ড বাঁদরামি করছে ও," আমার রুদ্র রূপে মা ছেলে দুজনেই গুটিয়ে গে। "আগেরদিন আমার নতুন মোবাইল নিচে ভাঙ্গল। আজকে পুরো প্ল্যান করে… ভাবতে পারছ?"

"তুমি একটু শান্ত হও," দেবযানী বলল। "ও কেন এ’সব করছে আমাদের বুঝতে হবে। আগে তো এ’রকম ছিল না।"

"নিকুচি করেছে চাইল্ড সাইকোলজির। পিছনে নিয়মিত কয়েক ঘা দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে," আমি ধুপ্‌ধাপ্‌ করে পাশের ঘরে চলে গেলাম। সময় কোথায়? মিটিংয়ের পরে নেটফ্লিক্স। বিকেলে আইপিএল।

বিল্টু চোখের জল মুছে নতুন পরিকল্পনায় বসলো। ইলেক্ট্রনিক্স জিনিসগুলো বড্ড দুষ্টু। ট্যাবলেট, ল্যাপটপ, মোবাইল, ভিডিও-গেম এরাই কেড়ে নিয়েছে বাবা-কে, ওর কাছ থেকে। তবে সহজে হাল ছাড়ার পাত্র নয় সেও। পরেরবার সবকটাকে একসঙ্গে বালতির জলে চোবাবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনাদের মূল্যবান প্রতিক্রিয়া জানান