রবিবার, ৩ জানুয়ারী, ২০২১

নয় থাকলে আরো কিছুক্ষণ


 ‘মনে আছে? আমার ছুটি শেষ হওয়ার আগের দিন তুমি দেখা করার জেদ করতে? দশ মিনিটের জন্যে হলেও’, বালিশে মাথা সামান্য কাত করে স্ত্রীকে বললেন অয়নবাবু।

‘থাকবেনা আবার। দেখা হলে, কিছুতেই বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করত না আমার। খালি ভাবতাম আর কিছু সময় কাটাই দুজন মিলে। তোমার কিসের যে এত তাড়া থাকত বাপু, আমি এখনও বুঝিনি’, অয়নবাবুর        হাত নিজের হাতে নিয়ে জবাব দিলেন সুজাতাদেবী।

‘তাড়া নয়গো, ভয়…‘

‘কিসের ভয় ছিল তোমার? ভাবতে আটকে রাখব? সে ক্ষমতা কি ছিল আমার?’

‘যাওয়ার সময় তুমি যে হাত টেনে ধরতে। চোখ ভরা জল নিয়ে জানতে চাইতে, আবার কবে দেখা হবে। ভয় পেতাম সেই ক্ষণটাকে। পিছুটানে বড় কষ্ট। পালাতে চাইতাম তাই’,

‘পালাতে তো এখনও চাইছ’,সুজাতাদেবী মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। দু’ফোঁটা অভিমানের জল গড়িয়ে পড়ল গালে।

ওরা দুজনেই একে ওপরের সাথে কোনো কথা বললেন না বেশ কয়েকটা মুহূর্ত। টেবিলে রাখা ঘড়িতে সেকেন্ডের কাটাটি শুধু নিজের মতন ‘টিক টিক’ শব্দে কাজ করে চলেছে। সে কারোর ভালোবাসার বা আবেগের তোয়াক্কা না করে নির্লিপ্ত ভাবে সময়ের ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছে।

‘ওটা আমাদের…’, টেবিলের তাকিয়ে অয়নবাবু বলার চেষ্টা করলেন। ঘড়িটার দিকে তাকালেই মন কেমন করছে তাঁর আজ।

‘হ্যাঁ, দাদা  দিয়েছিল’, সুজাতাদেবী না তাকিয়েই উত্তর দিলেন। বিয়েতে পাওয়া উপহারগুলোর মধ্যে এইটাই টিকে গেছে এতদিন।   

‘বাকিরা বাইরে গেল?’, অয়নবাবু ঘাড় উঁচু করে খালি ঘরে চোখ বুলিয়ে বল্‌লেন।

‘সব তোমার নাতনীর মাথা থেকে বেরিয়েছে। দাদু ঠাকুমাকে নাকি একা থাকতে দেবে। কি’রকম আদিখ্যেতা বল দেখি’, সুজাতাদেবী চোখ মুছে অনুযোগ করলেন।


মৃদু হাসলেন অয়নবাবু। ভাঙ্গলেন না সুজাতার কাছে, পরিকল্পনায় তাঁরও হাত ছিল।

‘তাহলে এখানেই ইতি গজগামিনী’, অয়নবাবুর কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। কাশি চেপে বললেন, ‘তোমার গান কানে নিয়ে যাব ভেবেছিলাম। শোনাবে? ভয় হয়, পুরোটা শোনার সময় যদি না থাকে হাতে।’

‘কোনো ব্যাপার নয়। বাকি রয়ে যায় যদি, তোমার কাছে গিয়েই শোনাব নাহয় কদিন পরে’।

ঘড়িটা টেবিলে উপুড় করে রেখে কাঁপা গলায় অয়নের ভালবাসার গানে সুর দিলেন সুজাতাদেবী। প্রিয় বন্ধুর শেষযাত্রার সময় এবারে আর পিছুটান বাড়াবেন না।।

1 টি মন্তব্য:

আপনাদের মূল্যবান প্রতিক্রিয়া জানান