“আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিবি বইতে?”
“নাঃ, কোনও
দরকার নেই। সব গুলিয়ে যাবে তাহলে,” আমি ঘাড় সোজা করে বাবা-কে বললাম। “এবারে ঢুকে পড়ছি।
বেশিক্ষন বাইরে অপেক্ষা করলে টেনশন বেড়ে যায়।“
“ঠিক আছে চলে
যা। একদম চিন্তা করবি না। পরীক্ষা খুব ভালো
হবে,” আমি পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে বাবা আমার মাথায় হাত দিয়ে বলল। আমি চারিদিকে একবার
তাকিয়ে নিলাম। পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষা আজ। যেখানে সিট পড়েছে তার বাইরে পুরো মেলা বসে
গেছে। বাবা-মায়েরা ডাব, দইয়ের ভাঁড় নিয়ে নিজের-নিজের ছেলেকে ঘিরে উদ্বিগ্ন চেহারায়
দাঁড়িয়ে। গতবছরের প্রশ্নপত্র খুব কঠিন এসেছিল। এবারে কেমন হয় তা নিয়ে বিভিন্ন জটলায়
জোর আলোচনা চলছে। দূরে বোধহয় ঋতুরাজ আর সোমদেব-কে দেখতে পেলাম। ওরাও শেষ মুহূর্তের
প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। আমি আর সময় নষ্ট না করে তিন লাফে স্কুলের ভিতরে ঢুকে পড়লাম।
বিল্ডিঙয়ের
গঠন, দেওয়ালের রঙ সবই একটু অদ্ভুত। সাধারণত স্কুলে যেমন হয়, তেমন নয়। রামধনুর যথেচ্ছ
পোঁচ পড়েছে সর্বত্র। এর আগে বাংলা, ইংরাজি বা অন্যান্য বিষয়ের পরীক্ষা হয়ে গেছে। তখন
এতোটা বৈচিত্র নজরে আসেনি। সিঁড়ির ধাপগুলোও যেন অত্যাধিক মসৃণ। পা পিছলে আছাড় খাওয়ার
যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আমি যথোপযুক্ত সাবধানতা অবলম্বন করে দোতলায়, এক্সাম রুমে চলে এলাম।
ক্লাসে তখনও
কেউ নেই। আমার জন্যে নির্ধারিত আসন রয়েছে লাস্ট বেঞ্চের আগে। সেখানে ক্লিপবোর্ড, পেন্সিল-বক্স,
রুলার ইত্যাদি রেখে গুছিয়ে মাথা নিচু করে বসলাম। মনোযোগ বাড়ানোর আদর্শ উপায়। কতক্ষণ
ছিলাম জানি না, অকস্মাৎ সব কটা ছেলে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল। সবারই ভীষণ গম্ভীর মুখ। কেউ
কারোর সাথে কথা বলছে না। ওয়ার্নিং বেল পড়তেই সিল্ড প্রশ্নপত্র বিলি হয়ে গেল। স্নায়ু
চূড়ান্তভাবে উত্তেজিত।
ফাইনাল বেলে
আরম্ভ হল পরীক্ষা। ও’দিকে কোশ্চেন পেপার খুলতেই আমার চোখ ছানাবড়া। কোথায় ফিজিক্স? এযে
রসায়নের কঠিন-কঠিন প্রশ্নে ভর্তি। নিশ্চয়ই কোনও গণ্ডগোল হয়েছে। ভুল করে পরের দিনের
পেপার আজ দিয়ে দিয়েছে। আমি হাসি মুখে পাশে দিপাঞ্জনের দিকে তাকালাম। আশা করেছিলাম ওরও
হতবাক মুখশ্রী দেখব। কিন্তু না। ছেলেটা মুখ গুঁজে একমনে লিখেই চলেছে।
“এই, কেমিস্ট্রি
পেপার কেন দিয়েছে?” আমি ফিসফিস করে বললাম ওকে।
“কী দেবে তাহলে?”
“ফিজিক্স!”
“ধুস্, ফিজিক্স
পরীক্ষা তো দু’দিন পরে।“
“বলিস কী?”
আমার চোখে জল চলে এল। খুব ইচ্ছে করল এক ছুটে বাইরে বাবার কাছে চলে যাই। একটা প্রচণ্ড
নিঃসঙ্গ, অসহায় ভাব উঠে এল পায়ের কাছ থেকে। কতবার সবার সঙ্গে রুটিন মিলিয়েছি। তাও এত
বড় ভুল কীভাবে করলাম? কী করব এখন? দু’দুটো পেপার দিতে হবে। অথচ আমার মাথা একেবারে শূন্য।
কেমিস্ট্রির একটা সংজ্ঞাও মনে পড়ছে না।
“কী ব্যাপার?
এক্সাম শুরু হতে না হতেই কথা বলা শুরু করে দিয়েছ?” রুমের পরিদর্শক স্যার কড়া চাহুনি
নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। “খাতা কেড়ে নেব নাকি?”
“স্যার ও আজ
ফিজিক্স পড়ে এসেছে,” দিপাঞ্জন দাঁত বের করে বলল। ক্লাসের বাকি ছেলেগুলো ওর কথা শুনে
একবার অবজ্ঞাভরে পিছনে তাকিয়ে নিজেদের কাজে মগ্ন হয়ে গেল।
“বটে। এমন বেয়াদব,
বেয়াক্কেলে ছাত্রের সাথে এমনই হওয়া উচিত,” স্যার দাঁত কিড়মিড় করলেন। “স্কুলড্রেসও পরেনি,
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। ছ্যাঃ!”
খেয়াল হল, সত্যি
তো। একটা পাজামা আর গেঞ্জি গায়ে বসে আছি। কি ভয়ানক! কি ভয়ানক!
ঘেমে স্নান
করে উঠে পড়লাম আমি। বুকের ভিতরে ধড়াস্-ধড়াস্ করছে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম, বিছানায় ছেলে,
মেয়ে, বউ নাক ডাকিয়ে ঘুমাচ্ছে। রাতবিরেতে শুধু আমার চোখে আর ঘুম এল না। অফিসে কাজের
চাপ বাড়লেই এই নিঃসীম আতঙ্কের দুঃস্বপ্নটা দেখি। এর থেকে মুক্তির উপায় জানা নেই।।
Hahahahha jata dream😃
উত্তরমুছুনজীবনটা যখন খুব চাপের মধ্যে দিয়ে যায় তখন এই স্বপ্ন আমিও দেখি। আমরা প্রত্যেকেই মনে হয় দেখি।
মুছুন